একটা ছোট উদাহরণের মাধ্যমে টেক রাজনীতি ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি ।
অনলাইনে গ্রামারলি নামে একটা জনপ্রিয় সফটওয়্যার বা অ্যাপ আছে, যা দিয়ে ইংরেজি ভাষার গ্রামার, বানান, ইত্যাদি কারেকশন করা যাচ্ছে। গ্রামারলি আমেরিকান ইংলিশ ফলো করে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহারকারীরা আমেরিকান ইংলিশেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
নিঃসন্দেহে এখানে সন্দেহবিদরা রাজনীতি খুঁজে পাবেন। এইভাবে টেকনোলজিস রাজনৈতিক প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে, এমনকি মানুষের জ্ঞান অর্জন ও চর্চাকেও নিয়ন্ত্রিত করছে ।
তথ্য-প্রযুক্তি পাল্টে দিচ্ছে রাজনীতি অর্থনীতি
যেমন, গুগল তাদের এলগোরিদম এমনভাবে সেটাপ করলো যে খুব হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট লিখলে তবেই সেটা সার্চ ইঞ্জিনে প্রথম দিকে চলে আসবে। নতুবা নয়। ইউনিক কন্টেন্টকে তারা রেফার করে।
আবার কোন ধরনের কন্টেন্ট লিখবো কোন ধরনেরটা লিখবোনা, সেটাও গুগলেরাই নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
কিছু ক্ষেত্রে ইউজার এক্সপেরিেন্সের ওপরে নির্ভর করে কি হবে পরবর্তী কন্টেন্ট তা বলে দেবে।
এছাড়া ব্যাকলিংককেও গুরুত্ব দেয়। এবং এইভাবে অনলাইনে ভালো বেচাবিক্রি, আয় ইনকামও করা যায়। ঝাঁপিয়ে পড়লো মানুষজন। যত বেশি মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ল, ততো বেশি ডিজিটাল পণ্যের বাজারও সৃষ্টি হলো। গ্রামারলির মতো প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারটির বিক্রি বেড়ে গেল। নিজের স্কিল বিক্রির জন্য মার্কেটপ্লেস ব্যবহার, ওয়েবসাইট বানানো, প্রয়োজন হয় ডেভেলপার, সফটওয়্যার, টুলস । এসবকিছুই তো আর ফ্রীতেও নাই। যা আছে তা দিয়ে আর একটা সময় চলেনা ।
বেশিরভাগ অনলাইন লেনদেনে ইউএস ডলারই ডিফল্ট মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। একজন বাংলাদেশি আরেকজন ইন্ডিয়ানের সাথে রুপি বা টাকা বিনিময় করছেনা, ডলারেই বিনিময় করছে । হয়তো আগামীর পৃথিবীতে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সিই হয়ে উঠবে মুদ্রা বাজারের প্রধান প্রভাবক ।
অনলাইন বাজার সৃষ্টি
অনলাইনে যে বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টি করা হচ্ছে তা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। চাহিদা তৈরি করা হয়েছে, মানুষকে ফ্রী অফার করা হয়েছে, ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। যেই পণ্যটি ব্যবহারে সহজ ও কোয়ালিটিফুল, মানুষ সেটিকে গ্রহণ করেছে ।
ধরেন আপনি একটা রুমালের ওপরে ই-কমার্স বানিয়েছেন। রুমাল খায়না, কিন্তু বাজার সৃষ্টি করতে হবে। বাজার সৃষ্টি করতে চাইলে চাহিদা তৈরি করতে হবে।
আবার ধরুন, আপনি একটা সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যেটার মাধ্যমে সহজেই বাংলাদেশের মার্কেট রিসার্চ করতে পারবেন। এখানে অলরেডি এই বাজারের চাহিদা আছে। মানে অনেকেই বাংলাদেশের অনলাইন ইন্ডাস্ট্রির ডেটা/এনালাইসিস খুঁজে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে তা নাই। এখানে যদি কোনো বিদেশি কোম্পানি সেই প্লাটফর্ম নিয়ে এদেশে আসে, তাহলে ডাটা মার্কেট ধরে ফেলল। আঠারো কোটি লোকের দেশে অনলাইন ইউজার ডেটা কত বড় আর লাভজনক প্লাটফর্ম হতে পারে। সেই ডেটাগুলো কি বাংলাদেশে থাকলো? বিদেশিরা বাজারের ভাড়াও নিলো, ডেটাও নিলো ।
তখন দেখা গেলো, অনলাইনের মাধ্যমে আগামীর পৃথিবীতে ব্যবসার ব্যাপক বৈচিত্র আসবে। এই বৈচিত্র আসার মুখ্য কারণ হয়ে উঠবে সার্চ ইঞ্জিন ও সোস্যাল মিডিয়া।